জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, নিম্নাঞ্চলে কমছেনা দুর্ভোগ, ছড়াচ্ছে রোগব্যাধি

জকিগঞ্জে কমছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ, ছড়াচ্ছে রোগব্যাধি

আল হাছিব তাপাদার, জকিগঞ্জ টুডে:: সিলেটের জকিগঞ্জে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি পানি কমছে। ফলে জকিগঞ্জের অনেক এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে নিম্নাঞ্চলে এখনো বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ভাঙা ডাইক দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চলে গিয়ে জমাট হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়ে মারাত্মক ও দুর্ভোগ ক্রমেই বেড়েই চলছে। বন্যাকবলিত এলাকার অনেক আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। ছড়াচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি।

অভিযোগ আছে, গ্রামঞ্চলের দিকে কিছু ত্রাণ দেওয়া হলেও এখন কেউ খোঁজ-খবর নিচ্ছে না। সড়ক থেকে দূরবর্তী গ্রাম ও নিম্নাঞ্চলে ত্রাণের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। জকিগঞ্জে একমাসের ব্যবধানে দুইবার ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার কারণে বহু বাড়িঘর, সড়ক, ব্রিজ, গ্রামীণ রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসলি জমির ফসল ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমায় ভয়াবহ ক্ষতির চিহ্ন ভেসে উঠছে। বন্যায় শত শত পরিবার ঠিকানা হারিয়েছে। পানি কমতে শুরু করায় বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্থি ফিরে এলেও তাদের দুর্ভোগ কমেনি। দুর্গত এলাকাগুলোতে স্যানিটেশন ব্যবস্থার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ভারতের বরাক নদী হয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জকিগঞ্জের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে পুরো উপজেলায় প্রায় ৪০টি স্থানের ডাইক দিয়ে পানি লোকালয়ে ঢুকে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হয়। এতে পৌর শহরের আংশিক এলাকা ছাড়া পুরো উপজেলা প্লাবিত হয়ে প্রায় দুইলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। বসতবাড়ি, বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। উপজেলার ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৮৮৫ টি পরিবারের সাড়ে ৩ হাজারের বেশি লোকজন আশ্রয় নেন। তাছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্রে ৭৯টি গরু ও ৪৯টি ছাগল রয়েছে। সোমবার পর্যন্ত জকিগঞ্জের বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে নিমজ্জিত। শেওলা-জকিগঞ্জ ও আটগ্রাম-জকিগঞ্জ সড়ক দিয়ে সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো তবে এখনো বড় যানবাহন ঝূঁকি নিয়ে চলছে। সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান সড়কের উপর দিয়ে এখনো পানি যাচ্ছে। তবে পানি কমার কারণে যানবাহন চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। গ্রামীণ সড়ক ও রাস্তাঘাটগুলো দিয়ে এখনো চলাচল করা সম্ভব হচ্ছেনা।

ভিডিও দেখুন এই লিংকে ‘জকিগঞ্জ আই টিভি’

জকিগঞ্জ সদর ইউপির ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লুৎফুর রহমান জানান, তার এলাকায় এখনো লোকজন পানিবন্দি হয়ে আছেন। সরকারী-বেসরকারী ত্রাণ সহায়তা গ্রাম পর্যায়ে অনেকটা কম যাচ্ছে। খাবারের জন্য নিম্নাঞ্চলে লোকজন মারাত্মক কষ্টের মধ্যে আছেন। গো খাদ্যর চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দুই বন্যায় মানুষ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অনেকের ঘরের ধান পানিতে ভেসে গেছে। নিম্নাঞ্চলের মানুষের জন্য সহায়তা বৃদ্ধি করতে তিনি দাবী জানিয়েছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আতাউর রহমান জানান, সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা কমছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সরকারী আশ্রয়কেন্দ্রেগুলোতে আশ্রয় নেয়া লোকজন এখনো আছেন। অনেক এলাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নিম্নাঞ্চলে এখনো অবনতি হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১১০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ সাড়ে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যার পানি পুরোপুরিভাবে না শুকালে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যাবেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর